
কাল স্থানীয় এক হোটেলে হয়ে গেল জাতীয় ক্রিকেট লীগের টি-টোয়েন্টি (এনসিএল) পরিচিত পর্ব এবং ক্রিকেটারদের নিলাম অনুষ্ঠান। সেখানে দল কেনাবেচার সাথে ক্রিকেটারদের পছন্দের হাটে বেছে নেয়ার পাশাপাশি দারম্নণ জমকালো অনুষ্ঠান, আর একগাদা বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটারের ছড়াছড়ি পুরো অনুষ্ঠানে যোগ হয়েছিল ভিন্ন মাত্রা। মূলত, জাতীয় লীগের নতুন সংযোজনকে মনে রাখার জন্যই বিসিবির চেষ্টায় এ স্বল্প সময়ে এ ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজন করা। বলতে গেলে দলগুলোকে ব্যক্তিমালিকানার কাছে ছেড়ে দিয়ে যেমনটি হাঁফ ছেড়েছে বিসিবি, তেমনি কতৃত্ব হারাবে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
আইপিএল গোটা ক্রিকেটকেই পরিবর্তন করে ফেলছে। ফ্রেঞ্চাইসিস পদ্ধতিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রবর্তন ঘটানোর ফলে বাংলাদেশেও এর ছোঁয়া লাগতে শুরম্ন করেছে। লংগার ভার্সন ক্রিকেটের সাথে টি-টোয়েন্টি ভার্সন জুড়ে দিয়ে ক্রিকেটকেই পরিবর্তন করতে চায় বিসিবি। আর সামনে রয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। সবকিছু মিলিয়ে জাতীয় লীগের এবারের প্রথম সংযোজন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আসর ঘটাতে চাচ্ছে নতুন মাইল ফলক।
ছয় বিভাগীয় দলগুলোকে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কিনে নেয়ায় এনসিএলে থাকছে না বিভাগীয় কর্তৃত্ব। আর ছয় বিভাগের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা হয়তো সামনে বিসিবির কাউন্সিলর হবার সুযোগও পাবেন। বরিশাল ও সিলেট ছাড়া প্রত্যেকটি বিভাগের প্রধান একজন, শুধু বরিশাল টিমটি বিক্রি না হওয়ায় কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে, এছাড়া দুই দিন আগেই বিভাগের বাকি পাঁচটি দল বিক্রি হয়ে যায়। সিলেট ও বরিশালের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান চারটি। প্রত্যেকটি বিভাগের একটু ভিন্ন আঙ্গিকে নামকরণ করা হয়েছে ঠিক আইপিএলের আদৌলে। ঢাকা বিভাগের নামকরণ করা হয়েছে ঢাকা ডাইনামাইটস, চট্টগ্রামের নামকরণ করা হয়েছে চট্টগ্রাম সাইক্লোন, খুলনার নামকরণ করা হয়েছে খুলনা কিংস, রাজশাহীর নামকরণ করা হয়েছে রাজশাহী রেঞ্জার্স, সিলেটের নামকরণ করা হয়েছে সুলতান সিলেট এবং বরিশালের নামকরণ করা হয়েছে বরিশাল বেস্নজার্স। ছয়টি দলকে বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৬৫ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে। বেক্সিমকো কিনেছে ঢাকা ডাইনামাইটসকে, নিল স্পোর্টস কিনেছে চট্টগ্রাম সাইক্লোনকে, বরিশালকে চারটি প্রতিষ্ঠান কিনলেও মূল প্রতিষ্ঠান পারটেক্স সাথে লাভিঞ্চি হোটেল এবং এনভয় গ্রম্নপ রয়েছে। এমএন ইন্টারন্যাশনাল কিনেছে রাজশাহী রেঞ্জার্সকে, খুলনার কিংসকে কিনেছে এটিএন বাংলা এবং সুলতান সিলেটকে কিনেছে রিজেভেন্স কোম্পানি।
৬৫ লাখ টাকা দিয়ে কিনলেও মালিকানাধীন এসব প্রতিষ্ঠান আবার তাদের স্বত্ব বিক্রী করতে পারবে। মোট ৭টি স্পন্সর তারা ব্যবহার করতে পারবে, যার মধ্যে বিক্রী হবে ৫টি। আর দুইটির মধ্যে একটি টুর্নামেনেটর অন্যটি নিজেদের লোগো ব্যবহার করতে পারবে। নিল স্পোর্টসের সিইও এবং এএফসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাদল জানালেন, আমরা ৫টি স্পন্সর বিক্রি করতে পারবো, তবে এখনো ঠিক হয়নি কাদের রাখবো। এই টুর্নামেন্টটি জমবে, তবে আরো সময় পেলে হয়তো এনসিএল আরো বেশি আকর্ষণ হত। তাছাড়া এখন বর্ষা মৌসুম, সময়টাও ঠিক হয়নি, পরের এনসিএল হয়তো ঠিক সময়ে করা হবে।
সবচেয়ে ব্যয়বহুল দল করেছে চট্টগ্রাম সাইক্লোন। প্রায় দেড়কোটি টাকা খরচ করছে তারা, তাদের মত বাকি পাঁচ বিভাগও প্রায় কোটি টাকা দিয়ে দল বানিয়েছে। তবে বিসিবির কাছ থেকে এটিএন রেকর্ড পুরো ইভেন্ট স্বত্ব পেলেও তাদের কাছ থেকে দেড়কোটি টাকা দিয়ে ডেসটিনি গ্রম্নপ টাইটেল স্পন্সর পেয়েছে। এ কারণে টুর্নামেনেটর নামকরণ করা হয়েছে ডেসটিনি এনসিএল টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এটিএন রেকর্ডের চেয়ারম্যান ড: মাহফুজুর রহমান অবশ্য শুধু এনসিএল নয়, ভবিষ্যতে বিসিবির আমত্মর্জাতিক ম্যাচ সম্প্রচারের ইচ্ছা পোষণ করেন। এ ছাড়া তিনি ক্রিকেটের জন্য একটি স্টেডিয়াম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন বলে কাল ঘোষণা করেছেন। খুব শীঘ্রই বিসিবিকে সাথে নিয়ে সেটি ঘোষণা দিবেন বলেও প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। দেড়কোটি টাকা দিয়ে ডেসটিনি গ্রম্নপ টাইটেল স্পন্সর চেক প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান গফফানুল হক এটিএন রেকর্ডের চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেন।
গতকাল এতসব আনন্দের ভীড়ে মিশে ছিল অতিরঞ্জিত উপস্থাপনা এবং বাড়তি আনন্দ দিতে অযাচিত ফ্যাশন শো করতে গিয়ে তা আইপিএলকে অনুসরণই প্রমান হয়েছে অন্যকিছু নয়। তারপরও এই প্রথম জাতীয় লীগের টি-টোয়েন্টি আসরকে জমকালো করতে ইভেন্ট ম্যানেজম্যানেটর অক্লামত্ম পরিশ্রম এবং বিসিবির দারম্নণ একটি উদ্যেগ সফল হবে বলে অনেকে মনে করছেন।
১১ এপ্রিল এনসিএলের পর্দা উঠবে, উদ্ভোধন অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিসিবি, টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান গাজী আশরাফ হোসেন লিপু জানালেন, ১১-২০ এপ্রিল নতুন সংযোজন এই টুর্নামেন্টটি সত্যিকার অর্থে বিশ্বকাপের প্রসত্মুতি হিসেবেই ক্রিকেটারদের সামনে আসবে, পাশাপাশি ক্রিকেটারদের কিছু বাড়তি আয়ও হবে।
মোট খেলা ১৮টি। এটিএন বাংলা ১৫টি খেলা সরাসরি সম্প্রচার করবে মিরপুর স্টেডিয়াম থেকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন