সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০১০

Rajshahi Rangers Beat Cyclone of Chittagong comprehensibly by 6 wickets


‘মনোমুগ্ধকর’ বলতে যা বোঝায় সেটা হয়নি, তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান একটা হয়েছে। আতশবাজির আলো ফোয়ারা হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের আকাশে। আইয়ুব বাচ্চু-ইভা রহমানের গানের তালে নেচেছে দর্শক। ছিল ছয় দলের খেলোয়াড়দের ঘিরে বর্ণিল পোশাকে র্যা্ম্প মডেলদের ক্যাটওয়াক। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেরিতে শুরু হওয়ায় বাতিল হয় পূর্বনির্ধারিত লেজার শো।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রংচং ও নাচ-গানের গুরুত্ব অনেক। ডেসটিনি গ্রুপ এনসিএল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সেদিক দিয়ে মন খারাপের কারণ হতেই পারে। উদ্বোধনী-সমাপনী অনুষ্ঠান বিশাল মাঠের এক কোণে হাতেগোনা কিছু পারফর্মারের ব্যাপার হলে সেটি টেলিভিশনে ভালো লাগলেও লাগতে পারে, মাঠের দর্শকদের মন ভরানো কঠিন। গ্যালারি উন্মুক্ত থাকায় সেই দর্শক ভালোই হলো কাল।
তবে ২০ ওভারের ক্রিকেটে ক্রিকেটীয় একটা মজাও আছে। গ্যালারির প্রায় পুরোটাই ভরিয়ে তোলা দর্শকদের মধ্যে ফ্লাডলাইটের আলোয় যারা সেই মজাটা নিতে এসেছিল, মাঠের ক্রিকেট দেখেও তারা নিশ্চয়ই হতাশ। টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে টি-টোয়েন্টিসুলভ স্কোর করতে পারল না সাইক্লোনস অব চিটাগং। প্রতিপক্ষ রাজশাহী রেঞ্জার্স ১৩৩ রানের টার্গেট ছুঁয়ে ফেলল ১৭ বল বাকি থাকতেই।
ক্রিকেটের গায়ে টি-টোয়েন্টির জ্বরটাই এখন সবচেয়ে উত্তপ্ত। বাংলাদেশেরও এই স্রোতে গা না ভাসানোর কোনো কারণ নেই। প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের পর এবার জাতীয় ক্রিকেট লিগেও টি-টোয়েন্টি দর্শন হলো। বিসিবি ক্রিকেটের আধুনিক রঙেই রাঙিয়ে তুলতে চায় সংক্ষিপ্ত পরিসরের এই ক্রিকেটকে। বাংলাদেশের ক্রিকেট তাই টি-টোয়েন্টি দিয়েই প্রথম দেখল ফ্র্যাঞ্চাইজ পদ্ধতি। আইপিএলের মতো নিলাম না হলেও খেলোয়াড় বণ্টন হয়েছে লটারির মাধ্যমে। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ওড়াউড়ি নেই, এই টুর্নামেন্ট তবু কিছু বাড়তি অর্থের মুখ তো দেখাবে ক্রিকেটারদের। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর আগমন আর বিদেশি তারকা ক্রিকেটারদের উপস্থিতিতে এনসিএল টি-টোয়েন্টি জমজমাট হবে বলেই পূর্বাভাস।
তবে উদ্বোধনী ম্যাচটার এই পূর্বাভাসে কোনো ভূমিকা নেই। একদিকে পাকিস্তানের শোয়েব আখতার-খুররম মনজুর, অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার এইডেন ব্লিজার্ড কিংবা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট ‘ছক্কা নাঈম’খ্যাত নাঈম ইসলাম। অথচ প্রতিদ্বন্দ্বিতার সামান্যতম আঁচও পাওয়া গেল না প্রথম ম্যাচে! সাইক্লোনস অব চিটাগংয়ের ওপেনার তামিম ইকবাল ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের আভাস দিয়েও ১২ বলে ১৪ রান করে সোহরাওয়ার্দীর বলে মিড উইকেটে জুনায়েদ সিদ্দিকের ক্যাচ। চিটাগংয়ের ইনিংসে যা একটু ‘সাইক্লোন’ দেখা গেল আরেক ওপেনার উত্তম সরকারের ব্যাটেই। নাদিফ চৌধুরীর বলে লং অনে সোহরাওয়ার্দীর ক্যাচ হওয়ার আগে তিন ছক্কা তিন চারে ২৯ বলে করেছেন ৫১ রান। তিন ছক্কার মধ্যে আবার সোহরাওয়ার্দীর এক ওভারেই দুটি, যার একটির ঠিকানা গ্যালারি।
শোয়েব আখতারের কাছে যা কিছু দেখার আশা, সেটা বল হাতেই। তার পরও শোয়েব বলে কথা। বিতর্ক আর গতির মিশেলে তিনি এমনই বড় তারকা যে এনসিএল টি-টোয়েন্টির দর্শকেরা ব্যাট হাতেও কিছু চাইল তাঁর কাছে। ব্যাটিংয়ে নামার সময় হাততালি আর হর্ষধ্বনিতে স্বাগত অভিবাদন পেলেন শোয়েব। ১১২ রানে দলের সপ্তম উইকেট পড়ার পর উইকেটে এসে শোয়েবও যেন দর্শকদের দাবি মেটাতে চাইলেন। প্রথম বলেই রাজশাহী রেঞ্জার্সের পেসার মুক্তারকে মাথার ওপর দিয়ে তুলে ছক্কা। এবং ওখানেই শেষ ব্যাটিংয়ে শোয়েব-পর্ব। ৬ রানে থেকেই পরের ওভারে শফিউল ইসলামের বলে বলে লং অনে হান্নানের ক্যাচ।
পাকিস্তানের এই তারকা ক্রিকেটার ব্যর্থ বল হাতেও—৩ ওভারে ৩১ রান দিয়ে থেকেছেন উইকেট-শূন্য। সোহরাওয়ার্দীর হাতে তো ছক্কাও খেলেন! আসলে রাজশাহীর উইকেটই পড়েছে মাত্র চারটি। ওপেনার ব্লিজার্ডের ১৭ বলে ২৫ আর নাঈমের ৩৭ বলে অপরাজিত ৫৬ রানের সৌজন্যে ৬ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে খালেদ মাসুদের দল।
রাজশাহী রেঞ্জার্স না হয় জয় দিয়ে শুরু করল টুর্নামেন্টটা, প্রথম ম্যাচ থেকে দর্শকেরা কি পেল? টি-টোয়েন্টির আসল মজা টানটান উত্তেজনার ছিটেফোঁটাও ছিল না ম্যাচে। মন ভরায়নি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও। শোয়েব আখতার-দর্শনটাই তাই একমাত্র প্রাপ্তি হয়ে থাকল দর্শকদের জন্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: সাইক্লোনস অব চিটাগং: ২০ ওভারে ১৩২ (উত্তম ৫১, নাফিস ২৫, তামিম ১৪, ফয়সাল ১১, নাসির ১১; মুক্তার ৩/২২, নাদিফ ২/১৭, সোহরাওয়ার্দী ২/২০, শফিউল ২/৩৩)। রাজশাহী রেঞ্জার্স: ১৭.১ ওভারে ১৩৩/৪ (নাঈম ৫৬*, ব্লিজার্ড ২৫, জুনায়েদ ২২, সোহরাওয়ার্দী ১২*। নাসির ১/১৪, এনামুল ১/২৩, শরীফুল্লাহ ১/২৩, ফয়সাল ১/৩৬, শোয়েব ০/৩১)। ফল: রাজশাহী রেঞ্জার্স ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুক্তার আলী।
Source: DPA

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন